শিল্পসংস্কৃতি-২ - পৃষ্ঠা নং-১০
- Details
- Category: Sample Data-Articles
- Published on Tuesday, 07 August 2012 13:55
- Written by Super User
- Hits: 2234
এটা বাস্তব জীবনচিত্রের বর্ণনা। নদীবক্ষে উপন্যাসটিতে রবীন্দ্রনাথ আশীর্বাদস্বরুপ লিখেছেন------‘উপন্যাসখানিতে মুসলমান চাষীগৃহস্থের যে সরল জীবনের ছবিখানি নিপুণভাবে পাঠকের কাছে খুলিয়া দিয়াছেন তাহার স্বাভাবিকত্ব, সরলতা ও নতুনত্বে আমি আনন্দলাভ করিয়াছি।’ আজাদ ঘটনাপ্রধান উপন্যাস নয়, সংলাপ প্রধান উপন্যাস। সংলাপে রয়েছে ব্যক্তি ও সমাজের রুচির পরিচয়। মুসলমান সমাজের আরবী ফার্সি সমৃদ্ধ ভাষার ব্যবহার এতে রয়েছে। এছাড়াও এ অঞ্চলের কথাভঙ্গীর পরিচয় পাওয়া যায় যেমন পান্তা ও পেয়াজের নাস্তা, কর্জ করা ইত্যাদি। উপন্যাসের কোনো কোনো বাক্য চমৎকার। যেমন ‘পুরাতন স্মৃতির কি দীর্ঘায়ু, পরমায়ু মোলায়েম অবিশ্বাস, তার হাসিতে। তার অসীম ব্যথার কালো আকাশে এ যেমন ঝকঝকে কটি তারা’ ইত্যাদি। উপন্যাসটি উদীয়মান বাঙালি মুসলমান মধ্যবিত্তের কাহিনী। কাজী আব্দুল ওদুদের নাট্যপ্রয়াস দুটো যথা ‘পথ ও বিপথ’ এবং “মানব বন্ধু’ পথ ও বিপথ তিন দৃশ্যের নাটক যেখানে আব্দুল ওদুদের সাহস ফুটে উঠেছে। এ নাটকে বিশ্বাস, ধর্ম, পরকাল, শ্রেণি সংগ্রাম মানবতা, প্রগতি, হিন্দু মুসলমানের বিরোধ ইত্যাদি বিষয়ে যুক্তি তর্কের অবতারণা করা হয়েছে।
মানব বন্ধু নাটকখানি দুই অঙ্কের বা দুই দৃশ্যের নাটক। প্রথম দৃশ্য মন্নুজানের শয়নকক্ষ এবং দ্বিতীয় দৃশ্যে মোহসীনের বৈঠকখানা। পাত্র পাত্রিরা হলেন মোহসীন অর্থাৎ দানবীর হাজী মুহম্মদ মোহসীন তাঁর বোন মন্নুজান, বাঁদী মেহের নিগার ও কোতায়ালী রজব আলী, মাধব আলী খাঁ, এ নাটকের মাধ্যমে কাজী আব্দুল ওদুদ মহৎ আদর্শ তথা মহৎ জীবনের কথা তুলে ধরতে চেয়েছেন। বিশেষত হাজী মুহম্মদ মোহসীনের উদার জীবনাদর্শের প্রেরণাই উদ্দেশ্য।
মীর পরিবার কাজী আব্দুল ওদুদের ছাত্রজীবনের রচনা। এতে পাঁচটি গল্প সংম্বলিত হয়েছে। বাঙালি মুসলমান সমাজের বিষয়বস্তুই এর উপজীব্য। গল্পের নাম দেখেই তা স্মরণ করা যায্। গল্পগুলো হল ‘মীর পরিবার’ ‘আশরাফ হোসেন’, ‘করিম পাগলা’, ‘হামিদ ও আবদুর রহিম’। মীর পরিবারে দেখা যায় বাঙালি মুসলমানরা শিক্ষাদীক্ষায় মনোযোগী হয়েছে কিন্তু আশরাফ আতরাফ পার্থক্য দূর হয়নি। দ্বিতীয় গল্পটি আশরাফ হোসেন নবশিক্ষিত মুসলমানদের সমাজ পরিবর্তনের একটা ধারাকে স্পর্শ করে।
কাজী আব্দুল ওদুদের রচনাবলীর ৪র্থ খণ্ড পর্যন্ত প্রকাশিত হয়েছে। ওদুদ রচনাবলীর প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ড সম্পাদনা করেছিলেন প্রখ্যাত প্রাবন্ধিক আব্দুল হক। প্রথম খণ্ডে আছে রবীন্দ্র কাব্যপাঠ, হিন্দু মুসলমান বিরোধ এবং নজরুল প্রতিভা। দ্বিতীয় খণ্ডে বাংলার জাগরণ, কয়েকটি গ্রন্থ সমালোচনাসহ চিঠিপত্র, অভিভাষণ, দিনলিপি ও কয়েকটি ছোট প্রবন্ধ সঙ্কলিত হয়েছে। তৃতীয় খণ্ডে গল্প উপন্যাস, ও নাটক এবং কথাসাহিত্য বিষয়ক আলোচনা, ‘শরৎচন্দ্র ও তারপর’ সন্নিবেশিত হয়েছে। চতুর্থ খণ্ডে কবিগুরু, গেটের প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ড সন্নিবেশিত হয়েছে। এছাড়া কাজী আব্দুল ওদুদের অপ্রকাশিত কয়েকটি প্রবন্ধ, আলোচনা, চিঠিপত্র ও গ্রন্থ সমালোচনা সন্নিবেশ করা হয়েছে। এগুলো বাংলা একাডেমি কর্তৃক প্রকাশ করা হয়।
বিশ শতকে ভাষা ও সাহিত্যের ব্যাপক উৎকর্ষতায় কাজী আব্দুল ওদুদের ভূমিকা অসামান্য। বাংলা সাহিত্য আধুনিক ও বিশ্বমানে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের অবদানের চেয়ে তাঁর অবদান কম নয়। তাঁর সাহিত্যের বিশেষত্ব হল তৎকালীন মুসলিম সমাজের গোঁড়ামি ও রক্ষণশীলতার বিপরীতে সে সমাজে তিনি বাস করেন সে সমাজের মধ্যে জ্ঞানের শিক্ষা প্রজ্জ্বলন করা। ইতিপূর্বে বুদ্ধির মুক্তি তথা মুসলিম সাহিত্য সমাজের কথা বলা হয়েছে। সাহিত্যে আধুনিকতার অর্থ হল সমাজ যেন সমকালীন বিশ্ব ধ্যানধারণার সাথে স্বজাতীয় সাহিত্যের বিলিন ঘটে। এ উদ্দেশ্যে তিনি কবিগুরু গেটের প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ড রচনা করেন। রবীন্দ্রনাথের পরেই গেটের সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য ও বিস্তৃত আলোচানা কাজী আবদুল ওদুদই করেন। ১৩৩৬ বঙ্গাব্দে চৈত্র মাসে অনুষ্ঠিত মুসলিম সাহিত্যসমাজের চতুর্থবার্ষিক অধিবেশনে গেটে শিরোনামে একটি প্রবন্ধ পাঠ করেন। প্রবন্ধটি আংশিক উদ্ধৃত হল------বলা বাহুল্য গেটের বিরাজ জীবন সাহিত্য সম্বন্ধে এই ক্ষুদ্র প্রবন্ধটিতে আদৌ সন্তষ্ট হতে পারিনি। গেটে সম্বন্ধে কোনো গ্রন্থ নেই বললেই চলে। কিন্তু বাংলার একালের জীবন ও সাহিত্যের সঙ্গে গেঁটের সম্পর্ক নিবিড়।